হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম সম্পূর্ণ নতুন আপডেট
বায়না দলিলের মেয়াদ শেষ হলে করণীয়আসসালামু আলাইকুম, আপনি কি হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য খুজতেছেন। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সঠিক তথ্য জানতে পারেননি। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। এখানে হেবাদ দলিল বাতিল করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আমি বেশ কিছুদিন ধরে খেয়াল করে দেখছি মানুষ google এ সার্চ করছে হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম লিখে। তাদেরকে সঠিক তথ্য জানানোর জন্য এবং নতুন যে নিয়ম রয়েছে সেগুলো জানানোর জন্য এই আর্টিকেলটি তৈরি করেছি।
হেবা দলিল বাতিল করার নিয়ম - মূলভাব
হেবা দলিল বাতিল নিয়ে সব মানুষের একটি কমন প্রশ্ন আছে। যেমন আমরা তিন ভাই বিদেশে ছিলাম এবং দেশে একজন ভাই ছিল। এখন দেশি অবস্থানকৃত ভাই আমাদের বাবা মা দের সেবা যত্ন করত এবং সকল কথা শুনতো। এখন আমাদের অনুপস্থিতিতে সে বাবা মা দের ভুলিয়ে আমাদের ভাগে যে সকল সম্পত্তি রয়েছে সব নিজের নামে লিখে নিয়েছে।
অথবা যে সকল জমি দামি দামি জায়গায় রয়েছে সেগুলো লিখে নিয়েছে এবং আমাদের জন্য রেখেছে যে সকল জমি কোন কাজের না সেই জমিগুলো। আবার অনেকেই প্রশ্ন করে যে আমার বোনের বাড়িতে মা রয়েছে সেখানে আমার বোন আমাদের ভাগের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছে। এটা কি বাতিল করার কোন সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ হেবা বিল এওয়াজ বাতিল করার নিয়ম।
আবার অনেকেই প্রশ্ন করে আমার দাদার অনেকগুলো সন্তান এবং তাদেরও সন্তান রয়েছে কিন্তু হঠাৎ করে আমার এক চাচাতো ভাই দাদাকে ভয় দেখিয়ে এবং কোন উপায়ে সব জমি নিজের নামে লিখে নিয়েছে। এক্ষেত্রে কি হেবাদ দলিল বাতিল করা যাবে না। এক্ষেত্রে হিবা বাতিল করা অবশ্যই যাবে এবং আদালতের নিয়ম অনুযায়ী এগুলো বাতিল করা হবে।
কিন্তু এই দলিল বাতিল করার পিছনে আপনাদেরকে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। তো বন্ধুরা আসুন এর সম্পর্কে আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করেহি। আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
হেবা দলিল কাকে বলে
কোন মানুষকে আপনার জমি দিয়ে দিবেন অথবা দান করবেন। আপনি সুস্থ মস্তিষ্কে এবং কোন মানুষের চাপ প্রয়োগ করা ছাড়াই। নিজ ইচ্ছায় খুশি হয়ে একজন মানুষকে যেই জমিটি দান করবেন তাকে হেবা দলিল বলা হয়। এই সেবাকে আমরা মূলত তিনভাবে বিভক্ত করতে পারি যেমন বাংলা ভাষায় বলতে গেলে দান।
এবং ইংরেজিতে গিফট এবং আরবি ভাষা হচ্ছে হেবা। দান মূলত কোন অসহায় মানুষ রয়েছে আপনার অনেক জমি এবং সম্পদ রয়েছে সে ক্ষেত্রে আপনি দয়া করে যদি কিছু ওই অসহায় মানুষকে দেন তাকেই মূলত দান বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ বায়না দলিলের মেয়াদ কত দিন জেনে নিন।
আপনার আত্মীয় কিংবা নিকটস্থ কোন বন্ধুর কাজে খুশি হয়ে তাকে উপহার স্বরূপ যেই জমিটি দান করবেন তাকে মূলত গিফট বলা হয়। এই তিন বিষয়টি একরকম হলেও এগুলোর কাজ কিন্তু কখনোই একরকম না।
হেবা দলিল কাকে কাকে করা যাবে
আপনি কিন্তু হেবা দলিল সবাইকে করতে পারবেন না কেননা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট মানুষ ছাড়া কখনোই হেবা করা যাবে না। আবার কেউ যদি আইন না মেনে করতে যায় তাহলে তার বিপক্ষে কোন মানুষ থাকলে এবং আদালতে যদি মামলা করে তাহলে এই সেবা দলিলটি একেবারে বাতিল হয়ে যাবে।
তো আসুন আমরা জেনে নেই সে বা কতজন মানুষকে করা যাবে এবং কাকে। হেবা দলিল মূলত ১৪ জন মানুষকে করা যাবে।
- ছেলে
- মেয়ে
- নাতি
- নাতনি
- বাবা
- মা
- দাদা
- দাদি
- নানা
- নানী
- বোন
- ভাই
- ছেলের- মেয়ে অথবা ছেলেকে
- মেয়ের-ছেলে অথবা মেয়েকে
এক কথায় বলতে গেলে আপনার রক্তের সম্পর্ক ব্যতীত অন্য কোন মানুষকে যদি সেবা করেন তাহলে সেটি আইনযোগ্য হবে না । যদিও বা কেউ আইন ভঙ্গ করে এ কাজটি করে তারপর তার রক্তের সম্পর্কিত কোন আত্মীয় যদি মামলা করে তাহলে এই হেবা দলিলটি বাতিল হয়ে যাবে।
কিন্তু যারা বিদেশে অবস্থান করে তারা যখন দেশে কোন জমি কেনে তখন দলিল লেখক এর কাছে ভালোভাবে আলোচনা করার পর টাকা পাঠিয়ে দেয়। তখন আইনজীবীরা টাকা নেবে বলে নিজের এলাকার কোন ব্যক্তিকে দানপত্র হিসেবে এটি করে দেয়।
কারণ হেবা দলিল করার খরচ খুবই কম জমির রেজিস্ট্রি করার থেকে। তাই যারা জমি রেজিস্ট্রি করে তারা টাকার লোভে এই কাজটি করে। কিন্তু আইনের দিক থেকে এটা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
হেবা দলিল বাতিল হওয়ার শর্তাবলী
- বাবা মায়ের জমি যদি কোন ছেলে অথবা মেয়ে বিনিময়ের মাধ্যমে এটি নেওয়ার চেষ্টা করে এবং আপনি আদালতে মামলা করার পর সেটি প্রমাণ করতে পারলে এই হেবা দলিলটি আইনতভাবে বাতিল করা হবে।
- ভয় দেখিয়ে অর্থাৎ মানসিকভাবে চাপের মধ্যে ফেলে। এবং এক কথায় বলতে গেলে ধরুন আপনার দাদাকে আপনার আরেকটি চাচাতো ভাই কিছু ভয় দেখালো এবং মানসিকভাবে অত্যাচার যেমন বাড়ির সব কিছু ভাঙচুর করে কারণ তার ওই জমিটি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে জোর করে যদি এবার করে নেওয়া হয় তারপর যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে বাতিল হয়ে যাবে।
- যদি হেবার ঘোষণা হয়ে থাকে কিন্তু আপনার আত্মীয়দের মধ্যে কেউই জানে না এই বিষয়ে। সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি কিন্তু এর ফাঁকে আপনি অন্য কাউকে আপনার জমিটি হেবা করে দিয়েছেন। হেবা দলিল করার শর্ত অনুযায়ী কাউকে আপনার সম্পদ দেওয়ার পর সেটি ঘোষণা করতে হবে। গোপনে যদি এই কাজটি করেন তাহলে সেটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
- দখল হস্তান্তর করতে হবে এখন আপনার সম্পদ আত্মীয় কিংবা ওই 14 জন ব্যক্তির মধ্যে কাউকে দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দখল তাকে বুঝিয়ে দেননি এক্ষেত্রে হবে কেউ যদি মামলা করে তাহলে এই দলিলটি বাতিল হয়ে যাবে।
- দাতা নাবালক অথবা মানসিক ভারসাম্যহীন হলে। আপনি যাকে জমি দিয়েছেন তার বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয় তাহলে এটি কখনোই হবে না। এবং আপনার দানকৃত জমি যদি কোন বুদ্ধিহীন মানুষকে দেন তাহলে এটি আইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।
- আদালত ঘোষিত দেউলিয়া বলা হলে। অনেক সময় দেখা যায় মালিক ব্যাংক থেকে অনেক ঋণী আছে তারপর ঋণ গুলো শোধ করতে পারছে না এবং দেশের বাহিরে চলে গিয়েছে। তখন কিন্তু আদালত ওই সম্পর্কটি দেউলিয়া ঘোষণা করে। এক্ষেত্রে হেবা দলিল কার্যকর করা সম্ভব না।
- বৈধ সম্পত্তি হতে হবে। অনেকেই রয়েছে যারা অন্যের জমি খারাপ উপায়ে দখল করার পর জমিটির মালিকানা হওয়ার জন্য তার নিকটস্থ কোন আত্মীয়কে এটি হেবা করে দেয়। এক্ষেত্রে এটি কার্যকর নাও হতে পারে। কেননা জমির মালিক যদি আসল না হয় তাহলে হেবা দলিল বাতিল হয়ে যাবে।
- আপনি আপনার বাবার জমি পেয়েছেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত বন্ধন নামা তৈরি করা হয়নি। আর আপনি এখনই আপনার স্ত্রীর নামে জমিটি সেবা করে দিয়েছেন। এখন আপনার স্ত্রী যদি জমিটি রেজিস্ট্রি করতে যায় তখন কিন্তু আইনত দিক দিয়ে হেবা করার জন্য এটি বাতিল করা হবে।
হেবা দলিল বাতিল না হওয়ার শর্তাবলী
হেবা করার পর জমির রূপ পরিবর্তন হলে সেটি আর বাতিল করা যাবে না। যেমন ধরুন আপনি একজনকে জমি দান করেছেন কিন্তু এরপর সে ওইখানে পুকুর তৈরি করেছে। এখন কিন্তু আইনত ভাবে বাতিল করা সম্ভব না।
আরও পড়ুনঃ মৌজা ম্যাপ তোলার নিয়ম।
আবার কোন বাড়ি ভেবা করেছেন তারপর ভূমিকম্পের কারণে বাড়িটি ভেঙ্গে গিয়েছে এখন আর আপনি চাইলেও এটি বাতিল করতে পারবেন না। দাতা কিংবা গ্রহীতার মধ্যে একজন যদি মারা যায় তাহলে হেবা দলিল বাতিল করা যাবে না।
হেবা দলিল বাতিল করার সঠিক সময়
কারো জমি হেবাদ দলিল করার পর আপনি যদি মনে করেন এটি করা তার ঠিক হয়নি এর জন্য আদালতে মামলা করেন তাহলে অবশ্যই হেবা করার এক বছরের মধ্যে এটি করতে হবে আপনি চাইলে ১৫ দিন এক মাস ছয় মাস এক বছর এর মধ্যে করতে পারেন। অনেকে রয়েছে যারা দুই বছর তিন বছর হেবা করার পর।
তারপরে যদি মামলা করেন তাহলে জমিটি গ্রহীতার নামে খারিজ হয়ে যাবে এক্ষেত্রে আপনার মামলার কোন দাম থাকবে না। তাই অবশ্যই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন কিছু করতে হলে অবশ্যই ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে করবেন। কেননা একবার যদি ভুল হয় তাহলে পরবর্তীতে আর সংশোধন করতে পারবে না।
more post
লেখকের শেষ কথা
আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদেরকে হেবা দলিল সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এখান থেকে যদি কোন সঠিক কিছু শিখতে পারেন বা জানতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার আত্মীয় কিংবা বন্ধুদের মধ্যে পোস্টটি শেয়ার করে দিবেন।
এমন নিত্যনতুন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখতে পারেন।
এস এইচ টেক আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url